শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৩

ছোঁয়াচে মৃত্যু

সংকটের বোমা বিস্ফোরণে বিক্ষত সময়
আর, আক্রান্ত মানুষের উদ্বেগের চিহ্ন বুঝিয়ে দেয়, অন্ধকার কতটা গভীর !
বারুদগন্ধি বাতাস ছুঁয়ে গেলে উপত্যকার আনাচ কানাচ
তখন কি তুফানের আশঙ্কা লুকিয়ে রাখতে পেরেছে কেউ ?

এভাবেই তুফানের শুরু,
ক্রমেই উৎকট ষড়যন্ত্রের অশ্রাব্য মুখোশগুলো ক্ষেপে ওঠে।
ঠিক যেন রক্তের পিপাসায় উদভ্রান্ত দানবের মত তাদের হুংকার !
ছোঁয়াচে মৃত্যুর খোঁজে রাস্তায় রাস্তায় একদল শকুন লেলিয়ে দিয়ে
যারা লাশের গন্ধ শুঁকে বেড়ায়,
তাদের প্রাসাদে দেখ, ঝুলে আছে ধ্বংসের ঘণ্টা।
রক্ত আর মৃত্যু দিয়ে মসনদ সাজাতে গিয়ে,
মনে আছে, কত হায়েনার পতন দেখেছে পৃথিবী ?
তবুও শেখেনা জালিম !
পতনের গন্ধ তাড়িয়ে দিয়ে,
আঁকড়ে পরে থাকার কেন এই অশুভ আহ্লাদ ?
কেন জালিমের প্রাসাদ সীমানা অবদি পৌছেনা অনিবার্য পতনের বার্তা ?
১৬।০৪।১৩

অনীবার্য ফুসে ওঠা


তুমুল তিমির নেমে এলে
দগ্ধ অন্তরগুলো বিস্ফোরিত হলে
দাঁতালো জানোয়ারের ভয়ে আর কেউ লুকিয়ে থাকেনা কোথাও...
তখন শুধু প্রতিরোধ,
সমস্ত শিকল কচলে প্রশস্ত সিনার ভেতরে দুর্বার অস্তিত্বের সুঠাম প্রকাশ, 
শোষণের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঠেসে দাও মৃত্যুহীন মৃত্যুর প্রতীজ্ঞা।

আর,
নারী, তুমি তার আস্তিন টেনে ধরোনা,  
মা, তোমার খোকাকে সাজিয়ে দাও,
বোন, তুমি প্রস্তুত হও বিরতিহীন প্রার্থনার জায়নামাজ হাতে,
অথবা কলম ধরো দৃঢ় প্রত্যয়ে ...    

কিছু সহজ অনুভূতি - ৪


ভুল কাজ, ভুল কথা, ভুল চিন্তা, ভুল ধারণা এসব মানুষের জীবনের কমন ফিচার। মানুষের মধ্যে ভাল খারাপ দুটো সত্ত্বাই দিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ। কিন্তু এক এক জন এই দুটো স্বত্বার ব্যবহার  এক এক মাত্রায় করে থাকেন। এই যেমন যে মানুষটিকে আমি ভাল কাজ করতে দেখছি, তিনি তার ভাল স্বত্বাকে কাজে লাগাতে সক্ষম হচ্ছেন।আবার তার মাঝে যে একেবারেই কোন খারাপ কাজের বৈশিষ্ট্য নেই, তা কিছুতেই বলা সম্ভব নয়।কিন্তু আল্লাহ তার ভাল পথে থাকার চেষ্টাটাই দেখবেন। আবার যে মানুষটির মধ্যে খারাপ কাজের বৈশিষ্ট্য বেশি, তার মাঝেও ভাল কাজের গুন বৈশিষ্ট্য অবশ্যই আছে।আমরা ভাল মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করি, কিন্তু যাকে খারাপ ভাবছি তার মাঝেও যে ভাল দিকগুলো রয়েছে, সেগুলো হয়তো আমার কাছে নেই। তাই ভাল গুন বৈশিষ্ট্য ভাগাভাগি করে নেবার জন্য মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়াটা খুবই জরুরী।মনে হয় এভাবেই ইসলামের সৌন্দর্য অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। এ কারনেই মানুষের সম্পর্কে খারাপ ধারনা রাখা কে আল্লাহ নিষেধ করে দিয়েছেন।
যদি শুধু ভাল মানুষগুলো নিজেদের গণ্ডির মধ্যে একটা কাটা তারের চেয়েও অধিক শক্তিশালী দেয়াল তৈরি করে দিয়ে, এর বাইরের মানুষগুলোকে দূরে ঠেলে দিতে থাকেন, তাদের ভালোত্ব কোনদিন প্রসারিত হবেনা।ইসলামের সুরভী ছড়িয়ে দিতে চাইলে, এই হীনমন্যতা থেকে বেড়িয়ে এসে সবার মাঝে সকল ভাল কাজ গুলো বিস্তৃত করে দিতে হবে।

এই ধরুন, যে মেয়েটা পর্দা করছে সে কেন শুধু ইসলামিক পরিবেশে চাকরী করতে চাইবে ? বরং তার দ্বারা একটা সাধারণ পরিবেশ প্রভাবিত হবে, তার ভাল গুনের সুরভীতে সেই পরিবেশের অন্য মানুষগুলো সুরভিত হবে। এখন হয়তো আমরা বলবো, এমন পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে যদি নিজেই পথভ্রষ্ট হয়ে যাই ? হুম, এই ভয়টা আমাদের মনে থাকবেই, এজন্যই আল্লাহ তার কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন। আল্লাহর রসূল যদি এই ভয় করে, কুরানের বানী প্রচারণা থেকে বিরত থাকতেন, তাহলে ইসলাম কোনদিনই প্রস্ফুটিত হতনা। তাঁর আশেপাশের পরিবেশ কতোখানি বিরূপ ছিল এটা আমরা সবাই জানি।

মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে যাক ইসলামের সকল সৌন্দর্য, যা কেবল মুসলমানদের হীনমন্যতার অবসানের মাধ্যমেই সম্ভব। মানবতার বন্ধু মোহাম্মদের দর্শন হোক আমাদের জন্য মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাবার পাথেয়। 

কিছু সহজ অনুভূতি - ৩



 প্রিয় রসূলের পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো যেই বুড়ীটা, মনে আছে? প্রিয় নবী তার অসুস্থতার কথা জেনে, ছুটে যান।দয়া আর মানবিকতার এক অতুলনীয় উদাহরণ স্থাপন  করেন প্রিয় নবী, সর্বকালের সর্ব যুগের শ্রেষ্ঠ এই মানুষ।
ইদানীং দেখি নিজেকে মুসলমান বলে যারা দাবী করছেন, তাদের অনেকেই খুব সহজে অন্যদের কাফির বলে গালি দিচ্ছেন।অন্যদের বিশ্বাসকে অসম্মান করা, অন্যদের সমালোচনা করে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিচু ভাষা ব্যবহার করতেও কারো কারো বাধেনা।অনেকের ধারণা মুসলমান ছাড়া পৃথিবীর বাকি সবাই যেন আল্লাহর সমস্ত নেয়ামত থেকেই বঞ্চিত। হুম, তারা আল্লাহর একটা নেয়ামত থেকে বঞ্চিত, সেটা হল ইসলাম। কিন্তু তাই বলে তাদের প্রতি ঘৃণায় ভরা অন্তর নিয়ে রি রি করতে থাকলে, কেউ কিভাবে মুসলিম হতে পারে? তাকে দিয়ে তো ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।অথচ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা একজন মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব। পৃথিবীতে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য।আল্লাহ নিজেই বলেছেন হেদায়েতের মালিক তিনি নিজে, আজ যে মানুষটি মুসলমান হবার কারণে অহংকারে উচ্ছ্বসিত, তার কাছ থেকে আল্লাহ হে-দায়াদ কেড়ে নেবেন না এটা কি কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারেন? কিংবা যে মানুষটি ইসলামের ছোঁয়া পাননি তিনি যে আল্লাহর হেদায়েতের ছায়ায় সিক্ত হবেননা সেটা কি কেউ বলতে পারবেন ?
ওহী নাজিলের পর প্রিয় নবী যখন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘরে ফিরলেন, চাঁদরে শরীর ঢেকে দিতে বললেন এবং তিনি ওহী নাজিলের ঘটনা খাদিজার (রা) কাছে খুলে বলে তাঁর জীবনের আশঙ্কার ভয় ব্যক্ত করলেন, ভীত কম্পিত রসূলকে খাদিজা (রা) সাহস যোগাচ্ছিলেন এই বলে,

“ না তা কক্ষনো হতে পারেনা। আল্লাহর কসম, তিনি আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ়-কারী, গরীব-দুঃখীর সাহায্যকারী, অতিথিপরায়ণ ও মানুষের বিপদে সাহায্যকারী ”

তিনি মানুষকে ভালবাসতে পেরেছিলেন বলেই, তাঁর ছোঁয়ায় সিক্ত হয়েছে উত্তপ্ত জাহেলিয়াত।অথচ তাঁকে জীবনের আদর্শ মেনে নিয়ে তাঁর সুন্নত অনুসরণ করা বাদ দিয়ে আজকে আমরা শুধু অন্যের সমালোচনায় মশগুল। কে আস্তিক, কে নাস্তিক, কে কোথায় খারাপ কাজ করছে এসবের ফিরিস্তি গাইতে গাইতে যায় বেলা। অথচ নিজেরা যে এখনও রসূলের প্রকৃত অনুসারী হতে পারিনি, তাঁর মত মানব সেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারিনি, নিজেদের মৌলিক মানবীয় গুণাবলীর ঘাটতি ব্যাপক, অথচ ইসলামিক গুণাবলীর সাথে সাথেই মৌলিক মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন না হতে পারলে, মানুষের কাছাকাছি না যেতে পারলে সত্যিকারের মুসলমান কিছুতেই হওয়া সম্ভব নয়। আমরা কি পারছি এই দু ধরনের গুনের সমাবেশ নিজের মধ্যে ঘটাতে ?

মোদ্দা কথা হল, একজন মুসলমান হবেন বিনয়ের এক মূর্ত প্রতীক।কারণ সে বিশ্বাস করে, আল্লাহ যেমন অসীম দয়াবান, তেমনি তার ক্রোধও অনেক ভয়ানক।তাই নিজেকে পারফেক্ট ভাবার রোগ থেকে আমাদের নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে।

কিছু সহজ অনুভূতি - ২


গেল বছর মানবাধিকার দিবসে একটা বিতর্কে অংশ নিয়েছিলাম। ঐ অনুষ্ঠান এ আমার খুব পছন্দের একজন ব্যক্তি প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন। বিচারপতি আব্দুর রোউফ উনার দীর্ঘ এক ঘণ্টার বক্তব্যের বেশিরভাগ কথাই ভুলে গেলেও একটা কথা আমি সারাজীবন মনে রাখবো ইনশাআল্লাহ। উনি বলেছিলেন, মানবাধিকার বলতে কিচ্ছু নেই। পৃথিবীতে আছে কেবল দায়িত্ব আর কর্তব্য। কারণ সবাই যদি নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে, তাহলে পৃথিবীতে যার যা পাবার তারা তা পেয়ে যাবে। একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে উনি বলছিলেন, মানুষ যদি প্রকৃতির প্রতি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে, তাহলে সে সুস্থ পরিবেশে, দূষনমুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারবে।স্যারের এই কথাকে যদি পৃথিবীর যে কোন খানে সেট করি তাহলে দেখবো কতখানি সত্য আর যথার্থতা লুকিয়ে আছে কথাটার মধ্যে।
এই যেমন ধরেন, একজন মা জানে, সে যদি সুস্থ না থাকে, ভালভাবে নিজের যত্ন না নেয়, তাহলে তার সুস্থ সন্তান জন্ম নেবার ঝুঁকি থাকবে, তার মানে এটা একজন মায়ের দায়িত্ব। আমাদের মা বাবা আমাদের জন্য আলহামদুলিল্লাহ সমস্ত দায়িত্ব নিখুঁতভাবে পালন করেন বলেই আমরা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বড় হই।
আবার যদি বলি, আমরা সামাজিক জীব বলেই, শুধুমাত্র নিজেকে নিয়ে চিন্তা করে, নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন, মানসিক উন্নয়ন কিংবা চারিত্রিক উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে, নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি যাতে আমার সাথে জড়িত অন্য মানুষগুলোর কথা মাথায় রেখে চেষ্টা সাধনাকে আমার দায়িত্ব মনে করি, এবং এভাবে যদি সব্বাই দায়িত্ব অনুধাবন করেন তাহলে একটা সমাজ সামগ্রিকভাবে উন্নত হবে। সবাই সবার যা পাবার তা পাবে, মানবাধিকার নিয়ে কারো আর দিবস পালন করতে হবেনা। পৃথিবীতে ধনী দরিদ্রের মাঝে আকাশ সমান ব্যবধান তৈরি হবেনা।
একটা  সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাবা মা যেমন নিজের বিলাসিতাকে ত্যাগ করেন, সব ছেলেমেয়েকে সমান অধিকার দেবার দায়িত্বটা একদম হৃদয় থেকে অনুভব করেন বলেই, তারা এতটা উদারভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। একটা পরিবার থেকে শুরু করে, এই দর্শনটা গোটা বিশ্বের সমস্ত সম্পর্কের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরানে হাকিমে ঠিক এই দায়িত্বের কথাটাই খুব সহজ সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন।কিন্তু আমরা সেটার চর্চা করতে আজ ব্যর্থ হচ্ছি, কারণ আমরা মুসলমানরাও আজ আমাদের দায়িত্ব ভুলে, নিজেদের ব্যাংক ব্যাল্যান্স বৃদ্ধি করতে ব্যস্ত। আল্লাহর রসূলের সাহাবীরা যেভাবে নিজেদের সমস্ত কিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন মানবতার কল্যাণের জন্য, আমরা তার ধারে কাছেও যেতে পারছিনা। আবার আমরা দাবী করি আমরা রসূলের অনুসারী। তিনি ছিলেন মানুষের সব থেকে কাছের, কিন্তু এখন যারা দাবী করছেন তারা মানুষের প্রতিনিধি, তারা মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এক কথায় সব্বাই  সবার দায়িত্ব থেকে আজ অনেক অনেক দূরে।   

নিজেকে নিয়ে সবটুকু ব্যস্ততার এই সময়ে, দায়িত্ব শব্দটা অনুভব করারও তো সময় নেই তাইনা ? :( :(

কিছু সহজ অনুভূতি - ১


মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে অন্তরের গভীর থেকে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ। তিনি আমাকে মুসলমান হিসেবে জন্ম গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন। প্রতি সেকেন্ডই তাঁর দয়ায় আমি পৃথিবীর বুকে বেঁচে আছি। আমার শরীরের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। আমার মাথা গোজার মত ঠাই শুধু নয়, ভাল বাসস্থান আছে। রাস্তার মানুষগুলোর মত আমাকে ঠাণ্ডা, রৌদ্র , বৃষ্টিতে সীমাহীন কষ্ট করতে হয়না। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিমিত রিযক এর ব্যবস্থা আল্লাহ করে দিয়েছেন। শুধু সতর ঢাকা নয়,পছন্দ মত রঙ কিংবা নকশার কাপড় আমি পরতে পারি। বাবা মা ভাই বোনের আদর স্নেহে বেঁড়ে ওঠার সৌভাগ্য হয়েছে, যেখানে একি পৃথিবীতে বহু মানুষ বাবা মায়ের, ভাই বোনের আদর যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়। আরও অনেক অনেক রহমতে ভরপুর আমার জীবন, যেগুলো গুনে শেষ করা সম্ভব নয়।এরকম ভাবে চিন্তা করলে আমি আল্লাহর নাশোকর বান্দাদের কাতেরের একজন। এখনও চাওয়া পাওয়ার হিসেব কষে মুখ গোমরা করতে আমার সময় লাগেনা। আল্লাহর এত এত রহমত পাবার পর ও মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার যদি এটা থাকতো, ওটা থাকতো ! যখন চিন্তা করি তখন নিজের প্রতি খুব রাগও হয়। দুনিয়াটা খুব খুব খুব সংক্ষিপ্ত জেনেও, মৃত্যু ওঁত পেতে আছে জেনেও কেন এত চাহিদা ? কেন এই জীবনের জন্য এত এত এত আয়োজন ? একদিন দুম করে মরে গিয়ে মাটির সাথে মিশে যাবার চিন্তাটা মাথায় রেখেই নিজের চাহিদাগুলো কেন সঙ্কুচিত করে নিতে পারিনা ? :'(

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৩

অনন্ত বেহেশতের আকাঙ্ক্ষা নির্ভর কিছু পঙক্তি...



প্রতিদিন আমি দিনের মৃত্যু দেখি রাতের ছুঁড়ির আঘাতে
আর রাতের মৃত্যু উদ্ভাসিত করে আলোর বিচ্ছুরণ...
খুব নিঃশব্দে অভিমানী পাতা ঝরার দৃশ্য দেখি,
সেখানেই দেখি সতেজ সবুজের মৃত্যু এবং
আর কেউ ফিরবেনা বলে আমার ডায়েরীর পাতায় পাতায় লিখে চলি
অনন্ত বেহেশতের আকাঙ্ক্ষা নির্ভর কিছু পঙক্তি।
তার ঘুমন্ত নিষ্পাপ চেহারায় অন্তর বুলিয়ে দিয়ে কতবার ভেবেছি,
চলে যেতে হবে ? যাবোই তো !
যেতে হবে বলে ,
পাড়ার মসজিদ-গামী হক চাচাও দিলেন বিদায়,
বিশ্বজিৎ চায়নি যেতে জানো ?
জামালি, তুমি দেখেছো তার বাঁচার প্রচেষ্টা ?
যেতে হবে তবু
কেন এই ক্ষণিকের সবুজ সন্ধ্যায় তোরা রক্ত আর লাশের দুর্গন্ধ এঁটে দিশ বল ?

ভাঙা গড়া


( পৃথিবীটা বড্ড বদলে যাচ্ছে, বদলাতেই আছে দিনকে দিন।আমরা চোখের সামনে শুধু বদলে যাওয়া পৃথিবীটা দেখছি। সত্যি বলতে কি আমরা এই রদবদলের বাইরে নই। সমাজের মূল্যবোধের সংজ্ঞা বদলে গিয়ে বিকৃত হচ্ছে। আজকে যেটাকে আমরা ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে বিশ্বাস করছি, কিছুকাল আগেও সেটা ছিল ঘোর অন্যায়। খুব সাবলিলভাবে বদলে যাওয়া পৃথিবীটাতে আমরা আসলে কতটুকু মানুষ বলে নিজেকে পরিচয় দেবার যোগ্যতা অর্জন করছি ? সেটা একটা বড় প্রশ্ন )

টেকনোলজি এর জয়জয়কার এর এই যুগে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলো খুব বেশি দ্রুত গতিতে আমাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে। মানুষের জীবনদর্শনও পরিবর্তন হচ্ছে সমান তালে। ইদানিং গ্রামে গঞ্জে আর কিছু না পৌঁছালেও স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো ঠিক পৌছে যাচ্ছে। ঘরে ঘরে টিভির পর্দায় মনমুগ্ধকর চোখা ধাধানো দৃশ্যের প্রতি মানুষের আকর্ষন ঠেসে যাচ্ছে। রঙিন পর্দায় জ্বল জ্বল করতে থাকা নায়িকার মেকাপ গেটাপ দেখে দেখে মানুষের রুচি প্রকৃতিও বদলাচ্ছে খুব সাবলিলভাবেই।

নায়ক নায়িকার পোশাক চলন বলন হয়ে উঠছে সাধারন মানুষের জন্য আদর্শ। তিশা কিংবা জয়ারা স্টার হয়ে উঠার পাশাপাশি এদের অনুসরণ করার মানুষদের সংখ্যাও বেরেই চলেছে। ভাল মন্দ ভাবার টাইম নাই, স্টাইল এ থাকা চাই। এই নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। এফ এম র্যা ডিগুলোতে রাত জেগে জেগে গানের জগতে ডুবিয়ে দেয়া হচ্ছে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের। কল এর মাধ্যমে বয়ফ্রেন্ড এর কাছে শুভেচ্ছা পৌঁছানোর জন্য জকিরাও বেশ উচ্ছসিত। ভালবাসার সংজ্ঞাটা দিনকে দিন বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড এর অবৈধ সম্পর্কের মধ্যে বন্দী হয়ে গোঙাতে শুরু করেছে।হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকার নামে নামে ঈদের বাজারে পোশাক বিক্রি হচ্ছে। সাথে সাথে সেই নায়িকারাও হয়ে উঠছে অনুকরণীয়।প্রেমিকের কাছে প্রেমের প্রস্তাব, কিভাবে পুরুষের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে হয় সেটা শিখে নেয়া এখন খুব সহজ। সেই সাথে ধর্ষনের শিকার মেয়েদের সংখ্যাটাও বাড়ছে।

রঙিন পর্দার প্রেম ভালবাসার অদ্ভুত প্রকাশভঙ্গী দেখে দেখে ছেলেমেয়রা নিজেদের স্বপ্নময়তা কিংবা জাফর স্যার এর ভাবালুতায় ভাসিয়ে দিচ্ছে। আসলে কোন জীবনদর্শনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজ, আমাদের প্রজন্ম ? এসবের মাঝে মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার উপকরণগুলো কোথায় ? স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির সংখ্যা তো বাড়েছেই, কিন্তু মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষা কোথায় পাচ্ছে সন্তানেরা ? টিভির পর্দায় টম ক্রুজ এর একশন তো দেখছে, কিন্তু জীবনে ভাল এবং সুন্দর দিকগুলোকে শিখে নিয়ে খারাপ আর অসত্যের বিরুদ্ধে একশানে যেতে শিখছে কি ছেলেমেয়েরা ?টম আর জেরির খুনসুটিতো দেখছেই, কিন্তু সত্য মিথ্যার তফাত করতে শিখছে তো শিশুরা ?
আসলে আমাদের জীবনপাঠশালায় শিক্ষকের অভাব এখন চরমে। সবাই শিখছি টেলিভিশন এর রঙিন পর্দা থেকে। যেখানে ভাল কিছু শেখার সুযোগটা ক্ষীণ। যারা এই রঙিন পর্দাগুলোর নেপথ্যে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন সবাই জুব হয়ে আছেন অর্থ উপার্জনের নেশায়, আর একটা খুব গভীর ষড়যন্ত্রের জাল রচনায় সব প্রচেষ্টা ঢেলে দিচ্ছে একটা দল।

গানবাজনা, নাটক সিনেমায় মজে যাওয়া মন মস্তিষ্কগুলো ভোতা হয়ে যাচ্ছে। নিজের মধ্যে মানুষের গুন বৈশিষ্টগুলো তরতাজা করে তোলার যে সময়টা সেটা অপচয় হচ্ছে অবহেলায়। কিছু রিয়্যালিটি শো এর মাধ্যমে অনেক বাবা মা এখন সন্তানদের স্টার বানাবার স্বপ্ন দেখছেন। সন্তানকে স্কুলের পাশাপাশি নাচগানের চর্চা করাচ্ছেন অনেক অনেক অভিভাবক। কিন্তু মানুষের প্রকৃত গুনাগুনের চর্চা করাচ্ছেন কয়জন অভিভাবক ?

এইসব সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আমাদের সমাজকে কি মানুষের মত মানুষ উপহার দিচ্ছে ? নাকি মানুষের ভেতরের মানুষটাকে মেরে ফেলে এক একটা অমানুষ বানাচ্ছে সেটা গভীরভাবে ভেবে দেখার বিষয়। এ পর্যন্ত আমি শুধু আমার দেশের সাংস্কৃতিক পরিবির্তনের কথা লিখছিলাম। আমাদের দেশে গত ২ দশকে আকাশ সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের প্রভাব এর ফসল আজকের বাংলাদেশ। এখনকার সাংস্কৃতিক এই বিরাট পরিবর্তন আরো সামনে গিয়ে কোন পর্যায়ে দাঁড়াতে পারে তার একটা অনুমান করা যায়।
পাশ্চাত্যে এই পরিবর্তনটা অনেক আগেই হয়ে গেছে। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিক বিপর্যয় যখন চূড়ান্ত তখন ঠিক সেই মুহুর্তে একি রকম বিপর্যয়ের সূচনা হয়েছে মাত্র আমাদের সমাজে।

পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের একটা স্পষ্ট চিত্র আমারা দেখেছি, দেখছি। সেই বিপর্যয়টা উপলব্ধি করতে পেরেছেন পাশ্চাত্যেরই অনেক সাহিত্যিক, দার্শনিক। কিন্তু এ থেকে উত্তরনের পথটা অনেক বেশি কঠিন। পশ্চিমা সমাজে মানুষের মধ্যে অস্তিত্ব সঙ্কটের মূলে রয়েছে মানুষের বিশ্বাসের বিভ্রান্তি। এবং বিশ্বাসের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে খুব সুক্ষভা্বে। মানুষের মনে ভোগ, আনন্দ, ফুর্তির স্পৃহা গেঁড়ে দিয়ে, সেখান থেকে বিশ্বাসের ভিতগুলোকে উপড়ে ফেলা হয়েছে ধীরে ধীরে। ফলে মানুষ অর্থ, আনন্দ ফুর্তি, নারী, এসবের গোলাম হতে পেরেছে, কিন্তু সত্যিকার আত্মিক প্রশান্তি থেকে নিজেদের সহস্র মাইল দূরে ঠেলে দিয়েছে। নারী স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের নাম করে কর্পোরেট জগতটা নারীদের ব্যবহার করে সমাজের ভাঙ্গন ঘটিয়েছে।ইংরেজিতে existential crisis যেটাকে বলা হয়ে থাকে, তার পরিনতি খুব বেশি ভয়ানক। এখন আমরা দেখি পাশ্চাত্যে পরিবার প্রথা ভেঙ্গে গেছে, এখানে সমর্কের পবিত্রতার কোন বালাই নেই। ইচ্ছা করলেই যে কেউ যে কারো সাথে যা ইচ্ছা করতে পারে। পত্রিকায় আমরা খবর পেয়েছি কিভাবে আপন বাবা মেয়েকে ধর্ষন করতে পারে। আমেরিকায় প্রতি মিনিটে কয়জন করে ধর্ষনের শিকার হয় সেটা নিয়ে জরিপের শেষ নেই। এই পশ্চিমারাই পৃথিবীর আনাচে কানাচে গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, মিলিটারি ইনভেশনের মাধ্যমে অন্যদেশের মানুষদের নির্বিচারে মারছে। এদের অর্থনৈতিক উম্ময়নের উদাহরণ আমরা সব সময়ই দিয়ে থাকি, কিন্তু এদের ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাওয়া সমাজের মানুষগুলো আসলে কতটুকু মানুষের পরিচয় বহন করে সেটা ভেবে দেখার বিষয়।

আমাদের সমাজও ঠিক সেদিকেই আগাচ্ছে। সূচনালগ্ন পেরিয়ে আমাদের সমাজ খুব দ্রত গতিতেই পাশ্চাত্যের পরিনতির দিকেই আগাচ্ছে। সেলিব্রেটি কালচার ইতিমধ্যেই অবস্থান করে নিয়েছে। সেলিব্রেটিদের অনুসরন করার অভ্যাস আমাদের ভেতর মনের অজান্তেই জায়গা করে নিচ্ছে। টেলিভিশনের রঙিন পর্দার মানুষগুলো আসলে কতটুকু অনুসরনীয় ? । তাদের জীবনযাত্রা মানুষের মনের পর্দায় যে দুলুনির সৃষ্টি করে চলেছে সেটা থেকে আমাদের রেহাই নেই। তাদের দেখেই মানুষ নিজের অজান্তেই স্বপ্নের দেশে ঘুরে বেরাবে, ভাবালুতায় ডুব দেবে, সম্পর্কগুলোকে নাটকের মত করে সাজাতে চাইবে। বাস্তবতা আর ধর্মীয় বিশ্বাসের মত কঠিন, ভাবগাম্ভির্যপূর্ন বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলতে শিখবে, আত্মিক, চারিত্রিক উন্নয়ন ভুলে গিয়ে ভোগ আর বস্তুবাদী চিন্তা চেতনার ট্যাবলেট খেয়ে মানুষের আসল পরিচয় ভুলে যাবে। তালাকের সংখ্যা ভিশন রকম বেড়েই চলেছে ইদানিং। সাথে সাথে লিভটুগ্যাদারের মত ঘটনা সেলিব্রেটিদের অনেকেই করছেন ইতিমধ্যেই। কিছুদিন আগে ইমনের ঘটনা আমরা জেনেছি, সে তার গার্লফেন্ড প্রইবর্তনের সাথে সাথে লিভটুগ্যাদার এর রেকর্ড করতে যাচ্ছিল। এরাই আবার টিভির পর্দায় হাস্যজ্জ্বল মুখ নিয়ে প্রেম বিরহের ফিরিস্তি গাইবে।

নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্বাধীনতার নামে তাদেরকে নোংরামিতে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, আর নারীরা দলে দলে এই ধ্বংস লীলায় অংশ নিতে ছুটছে। সুন্দরী প্রতিযগিতার মাধ্যমে চ্যানেল আই এর মত ধ্বংসবাজরা যৌনকর্মী পয়দা করছে, নারীদের ভোগের সামগ্রী বানাচ্ছে অথচ এর পরিনতি কতটা ভয়ানক আমরা এখনো উপলব্ধি করতে পারছিনা কেন ? এক সময় এই নারীরাই তাদের মান মর্যাদা পাশ্চাত্যের নারীদের মতই একটা ভয়ানক অন্ধকার জগতে বিলিন করে দেবে। ভোগের পন্যে পরিনত হয়ে আমাদের সমাজের মেয়েরাও ভুলে যাবে তাদের প্রকৃত মর্যাদা। পোশাকে আশাকে নেংকটামিকেই ওরা স্বাধীনতা বলে মনে প্রানে বিশ্বাস করতে শিখবে, ঠিক এখন যেমনটা ভাবছে পশ্চিমা নারীরা।

খারাপগুলো শুধু মেনে নিতে নিতে সবাই এক সময় খারাপগুলোকে খারাপ বলতেও ভুলে যাবো।বলতে শিখবো এসবতো ব্যাক্তি স্বাধীনতার বিষয়। এভাবেই আমাদের সমাজ পাশ্চাত্যের পরিনতির দিকে ঝুঁকে যেতে যেতে এক সময় হয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানুষেরা Existential Crisis এ ভুগতে শুরু করবে। মানুষ শান্তির জন্য হন্যে হয়ে হাতরাতে থাকবে অথচ বুঝে উঠতে পারবেনা কিসে তাদের শান্তি। পাশ্চাত্যের মানুষেরা যেভাবে প্রকৃত ইসলাম চর্চায় শান্তির পরশ খুঁজে পাচ্ছে, সেভাবে হয়তো আবার আমাদের সমাজের মানুষেরাও শান্তির জন্য পুনরায় ইসলামের সান্ন্যিদ্ধ পেতে দিকে দিকে ছুটে আসবে।
কিন্তু ভাংগা গড়ার এই খেলায় কিছু মানুষ কাজ করে যাবে শুধু প্রশান্তি প্রতিষ্টার জন্য। সেই দলের মানুষেরা মানুষের সঠিক পরিচয় দেবার মত সুযোগ্য হয়েই নিজেদের গড়ে নেবে শত বাধা উপেক্ষা করে ......

আমার সমাজসেবী মা


বিসমিল্লাহীররহমানীররহীম।
সবার জীবনেই মা হচ্ছেন সব থেকে সেরা ব্যক্তিত্ব, সেরা নারী, সব থেকে নিখাদ আর অকৃত্রিম ভালবাসার মানুষটি মা । আমার মা ও আমার জন্য ঠিক তাই। সেই সাথে আমার মা আমার প্রথম এবং সেরা শিক্ষকও। এবং আমার মা ( প্রিয় রসূল (সা:) এর পর )  আমার জন্য সেরা আদর্শ।
আমার মা একজন সমাজসেবী। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি মা সব সময় গরীব অভাবীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার সামান্য কিছু সামর্থ্য নিয়েই। বাড়ির কাজে সহযোগিতা করত যেই মহিলা কিংবা মেয়েগুলো, মা কোনদিন তাদের কে ছেড়ে খাবার খায়নি। তাদেরকে সাথে নিয়ে ডাইনিং টেবিল এ বসে খেতে দেখে পাশের বাড়ির খালাম্মারা প্রায় মশকরা করতেন।আমাদের বাড়িতে যারা মাকে কাজে সহযোগিতার জন্য থেকেছে তারা দীর্ঘদিন থেকেছে, কারণ মায়ের ভাল ব্যবহার আর যত্ন আত্তি। মা আমাদের শিখিয়েছেন আমরা যা খাবো তাদের কেও তাই খাওয়াবো। আমরা যা পরবো তাদেরকেও তাই পরতে দেবো, এবং এটাই আমাদের প্রিয় নবী( সা:) এর সুন্নাহ।
আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে একটু দূরে ঠাকুরগাঁও শহরে আমরা থাকতাম। গ্রাম থেকে কিছুদিন পর পর অনেক মানুষ আসতো চিকিৎসার জন্য। আমার মা হলেন সেই সব মানুষদের নিত্য সঙ্গী। কার জন্য কোন ডাক্তার ভাল, কোথায় গেলে গড়িব মানুষগুলো একটু কম টাকায় ডাক্তার দেখাতে পারবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার খালা সদর হাসপাতাল এর গাইনোকলজিস্ট হওয়ায় মা অভাবী মানুষদের বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতেন। খালাও একজন ডাক্তার হিসেবে গড়িবদের পাশে দাঁড়ান সব সময়। মাঝে মাঝে ক্লিনিকে রোগী ভর্তি থাকতো অনেকদিন। মা প্রতিদিন হাসপাতাল এ খাবার নিয়ে দিয়ে আসতেন । যদিও তারা আমাদের আত্মীয় কিংবা কাছের কেউ না। একবার আমার নানা বাড়িতে কাজ করতেন একজন মুরুব্বী, তার ভাইকে সদর হাসপাতাল এ ভর্তি করানো হল। খুব জটিল একটা অপারেশন হয়েছে তার। টানা তিন মাস হাসপাতাল এ ভর্তি ছিলেন তিনি। এই তিন মাস আমাদের বাড়ি থেকে মা খাবার নিয়ে দিয়ে এসেছেন হাসপাতাল এ। যদিও শেষ পর্যন্ত মানুষটা মারা গিয়েছিলেন। মা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। কত মানুষের কাছ থেকে রক্ত যোগার করেছেন, টাকা সংগ্রহ করেছেন এই লোকটার জন্য !!
মায়ের কাছে শিখেছি কিভাবে মানুষের সাহায্যে একটুখানি প্রচেষ্টা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।
আমার মেজ ফুফু। আল্লাহ তাকে চরম দারিদ্র দিয়ে পরীক্ষায় ফেলেছেন। আর আমার মা বাবা তার জন্য করে যাচ্ছেন। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি আর এখন পর্যন্ত দেখছি মা কিভাবে ফুফুর সংসারে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এখন আমার ভাই বোনেরাও ফুফুকে সাহায্য করছে বলে আরও ভাল লাগে। আল্লাহ ওদের সবাইকে আমার মায়ের মত হবার তৌফিক দিন আর ওদের সামর্থ্য বাড়িয়ে দিন। আমীন।
ঈদগুলোতে প্রায় সময়ই আমাদের নতুন কাপড় কেনা হতনা। যখন ছোট ছিলাম কান্নাকাটি করে আবদার করে বসতাম। আব্বা মা আমাদের কে কাপড় দেবার চেয়ে বাড়িতে অন্যদের উপহারের কাপড় নিয়ে আসতেন আগে। যৎসামান্য সামর্থ্যের মধ্যেই কিছু অভাবী মানুষের জন্য আজীবন আব্বা মায়ের এই বরাদ্দ অটুট থেকেছে।এসব দিয়ে থুয়ে কখনো কখনো আমাদের জন্য আব্বা ঈদের কাপড় কিনে দিতেন। তখন খারাপ লাগতো ঈদে কাপড় না পেলে। কিন্তু এখন বুঝি আব্বা মা আমাদের কি শিখিয়ে গেছেন।
আব্বা মার নিম্ন মধ্যবিত্ত টানাটানির সংসার এ আমাদের চার ভাইবোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে এতদূর নিয়ে আসাটাই ছিল একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। আব্বা ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সামান্য বেতন আর ফসল থেকে যা আয় হত তাই দিয়েই সব কিছু চলেছে। আল্লাহ আমার বাবা মা কে উত্তম জান্নাতের জন্য কবুল করে নিন।আমীন।
আমার মায়ের সমাজসেবার বর্ণনা তো সব দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ সব কিছু মনেও নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখে আসছি মা প্রতিটা মুহূর্তই মানুষের জন্য ভাবেন। কোথায় কে কোন বিপদের মধ্যে আছেন, কার জন্য কি করতে পারেন এসব নিয়েই মায়ের ভাবনা আর আমার আব্বা হলেন মায়ের জন্য খুঁটি। আব্বার সহযোগিতা ছাড়া কি মা পারতেন এসব করতে ?
হয়তোবা আমার মা খুব বড় কিছু করতে পারেননি, কিন্তু যা করেছেন ,করছেন তাই আমাদের ভাইবোনদের জন্য আদর্শ। আমার মা একজন প্রকৃত ভাল মানুষ এটাই আমার গর্ব। আল্লাহ আমার মায়ের সব ভাল কাজের উত্তম প্রতিদান দিন আর গুনাহগুলো মাফ করে দিন। আমীন