বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৩

আমার সমাজসেবী মা


বিসমিল্লাহীররহমানীররহীম।
সবার জীবনেই মা হচ্ছেন সব থেকে সেরা ব্যক্তিত্ব, সেরা নারী, সব থেকে নিখাদ আর অকৃত্রিম ভালবাসার মানুষটি মা । আমার মা ও আমার জন্য ঠিক তাই। সেই সাথে আমার মা আমার প্রথম এবং সেরা শিক্ষকও। এবং আমার মা ( প্রিয় রসূল (সা:) এর পর )  আমার জন্য সেরা আদর্শ।
আমার মা একজন সমাজসেবী। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি মা সব সময় গরীব অভাবীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার সামান্য কিছু সামর্থ্য নিয়েই। বাড়ির কাজে সহযোগিতা করত যেই মহিলা কিংবা মেয়েগুলো, মা কোনদিন তাদের কে ছেড়ে খাবার খায়নি। তাদেরকে সাথে নিয়ে ডাইনিং টেবিল এ বসে খেতে দেখে পাশের বাড়ির খালাম্মারা প্রায় মশকরা করতেন।আমাদের বাড়িতে যারা মাকে কাজে সহযোগিতার জন্য থেকেছে তারা দীর্ঘদিন থেকেছে, কারণ মায়ের ভাল ব্যবহার আর যত্ন আত্তি। মা আমাদের শিখিয়েছেন আমরা যা খাবো তাদের কেও তাই খাওয়াবো। আমরা যা পরবো তাদেরকেও তাই পরতে দেবো, এবং এটাই আমাদের প্রিয় নবী( সা:) এর সুন্নাহ।
আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে একটু দূরে ঠাকুরগাঁও শহরে আমরা থাকতাম। গ্রাম থেকে কিছুদিন পর পর অনেক মানুষ আসতো চিকিৎসার জন্য। আমার মা হলেন সেই সব মানুষদের নিত্য সঙ্গী। কার জন্য কোন ডাক্তার ভাল, কোথায় গেলে গড়িব মানুষগুলো একটু কম টাকায় ডাক্তার দেখাতে পারবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার খালা সদর হাসপাতাল এর গাইনোকলজিস্ট হওয়ায় মা অভাবী মানুষদের বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতেন। খালাও একজন ডাক্তার হিসেবে গড়িবদের পাশে দাঁড়ান সব সময়। মাঝে মাঝে ক্লিনিকে রোগী ভর্তি থাকতো অনেকদিন। মা প্রতিদিন হাসপাতাল এ খাবার নিয়ে দিয়ে আসতেন । যদিও তারা আমাদের আত্মীয় কিংবা কাছের কেউ না। একবার আমার নানা বাড়িতে কাজ করতেন একজন মুরুব্বী, তার ভাইকে সদর হাসপাতাল এ ভর্তি করানো হল। খুব জটিল একটা অপারেশন হয়েছে তার। টানা তিন মাস হাসপাতাল এ ভর্তি ছিলেন তিনি। এই তিন মাস আমাদের বাড়ি থেকে মা খাবার নিয়ে দিয়ে এসেছেন হাসপাতাল এ। যদিও শেষ পর্যন্ত মানুষটা মারা গিয়েছিলেন। মা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। কত মানুষের কাছ থেকে রক্ত যোগার করেছেন, টাকা সংগ্রহ করেছেন এই লোকটার জন্য !!
মায়ের কাছে শিখেছি কিভাবে মানুষের সাহায্যে একটুখানি প্রচেষ্টা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।
আমার মেজ ফুফু। আল্লাহ তাকে চরম দারিদ্র দিয়ে পরীক্ষায় ফেলেছেন। আর আমার মা বাবা তার জন্য করে যাচ্ছেন। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি আর এখন পর্যন্ত দেখছি মা কিভাবে ফুফুর সংসারে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এখন আমার ভাই বোনেরাও ফুফুকে সাহায্য করছে বলে আরও ভাল লাগে। আল্লাহ ওদের সবাইকে আমার মায়ের মত হবার তৌফিক দিন আর ওদের সামর্থ্য বাড়িয়ে দিন। আমীন।
ঈদগুলোতে প্রায় সময়ই আমাদের নতুন কাপড় কেনা হতনা। যখন ছোট ছিলাম কান্নাকাটি করে আবদার করে বসতাম। আব্বা মা আমাদের কে কাপড় দেবার চেয়ে বাড়িতে অন্যদের উপহারের কাপড় নিয়ে আসতেন আগে। যৎসামান্য সামর্থ্যের মধ্যেই কিছু অভাবী মানুষের জন্য আজীবন আব্বা মায়ের এই বরাদ্দ অটুট থেকেছে।এসব দিয়ে থুয়ে কখনো কখনো আমাদের জন্য আব্বা ঈদের কাপড় কিনে দিতেন। তখন খারাপ লাগতো ঈদে কাপড় না পেলে। কিন্তু এখন বুঝি আব্বা মা আমাদের কি শিখিয়ে গেছেন।
আব্বা মার নিম্ন মধ্যবিত্ত টানাটানির সংসার এ আমাদের চার ভাইবোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে এতদূর নিয়ে আসাটাই ছিল একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। আব্বা ছিলেন প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সামান্য বেতন আর ফসল থেকে যা আয় হত তাই দিয়েই সব কিছু চলেছে। আল্লাহ আমার বাবা মা কে উত্তম জান্নাতের জন্য কবুল করে নিন।আমীন।
আমার মায়ের সমাজসেবার বর্ণনা তো সব দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ সব কিছু মনেও নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখে আসছি মা প্রতিটা মুহূর্তই মানুষের জন্য ভাবেন। কোথায় কে কোন বিপদের মধ্যে আছেন, কার জন্য কি করতে পারেন এসব নিয়েই মায়ের ভাবনা আর আমার আব্বা হলেন মায়ের জন্য খুঁটি। আব্বার সহযোগিতা ছাড়া কি মা পারতেন এসব করতে ?
হয়তোবা আমার মা খুব বড় কিছু করতে পারেননি, কিন্তু যা করেছেন ,করছেন তাই আমাদের ভাইবোনদের জন্য আদর্শ। আমার মা একজন প্রকৃত ভাল মানুষ এটাই আমার গর্ব। আল্লাহ আমার মায়ের সব ভাল কাজের উত্তম প্রতিদান দিন আর গুনাহগুলো মাফ করে দিন। আমীন     

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন