শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৩

কিছু সহজ অনুভূতি - ৩



 প্রিয় রসূলের পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো যেই বুড়ীটা, মনে আছে? প্রিয় নবী তার অসুস্থতার কথা জেনে, ছুটে যান।দয়া আর মানবিকতার এক অতুলনীয় উদাহরণ স্থাপন  করেন প্রিয় নবী, সর্বকালের সর্ব যুগের শ্রেষ্ঠ এই মানুষ।
ইদানীং দেখি নিজেকে মুসলমান বলে যারা দাবী করছেন, তাদের অনেকেই খুব সহজে অন্যদের কাফির বলে গালি দিচ্ছেন।অন্যদের বিশ্বাসকে অসম্মান করা, অন্যদের সমালোচনা করে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিচু ভাষা ব্যবহার করতেও কারো কারো বাধেনা।অনেকের ধারণা মুসলমান ছাড়া পৃথিবীর বাকি সবাই যেন আল্লাহর সমস্ত নেয়ামত থেকেই বঞ্চিত। হুম, তারা আল্লাহর একটা নেয়ামত থেকে বঞ্চিত, সেটা হল ইসলাম। কিন্তু তাই বলে তাদের প্রতি ঘৃণায় ভরা অন্তর নিয়ে রি রি করতে থাকলে, কেউ কিভাবে মুসলিম হতে পারে? তাকে দিয়ে তো ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।অথচ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা একজন মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব। পৃথিবীতে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য।আল্লাহ নিজেই বলেছেন হেদায়েতের মালিক তিনি নিজে, আজ যে মানুষটি মুসলমান হবার কারণে অহংকারে উচ্ছ্বসিত, তার কাছ থেকে আল্লাহ হে-দায়াদ কেড়ে নেবেন না এটা কি কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারেন? কিংবা যে মানুষটি ইসলামের ছোঁয়া পাননি তিনি যে আল্লাহর হেদায়েতের ছায়ায় সিক্ত হবেননা সেটা কি কেউ বলতে পারবেন ?
ওহী নাজিলের পর প্রিয় নবী যখন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘরে ফিরলেন, চাঁদরে শরীর ঢেকে দিতে বললেন এবং তিনি ওহী নাজিলের ঘটনা খাদিজার (রা) কাছে খুলে বলে তাঁর জীবনের আশঙ্কার ভয় ব্যক্ত করলেন, ভীত কম্পিত রসূলকে খাদিজা (রা) সাহস যোগাচ্ছিলেন এই বলে,

“ না তা কক্ষনো হতে পারেনা। আল্লাহর কসম, তিনি আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ়-কারী, গরীব-দুঃখীর সাহায্যকারী, অতিথিপরায়ণ ও মানুষের বিপদে সাহায্যকারী ”

তিনি মানুষকে ভালবাসতে পেরেছিলেন বলেই, তাঁর ছোঁয়ায় সিক্ত হয়েছে উত্তপ্ত জাহেলিয়াত।অথচ তাঁকে জীবনের আদর্শ মেনে নিয়ে তাঁর সুন্নত অনুসরণ করা বাদ দিয়ে আজকে আমরা শুধু অন্যের সমালোচনায় মশগুল। কে আস্তিক, কে নাস্তিক, কে কোথায় খারাপ কাজ করছে এসবের ফিরিস্তি গাইতে গাইতে যায় বেলা। অথচ নিজেরা যে এখনও রসূলের প্রকৃত অনুসারী হতে পারিনি, তাঁর মত মানব সেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারিনি, নিজেদের মৌলিক মানবীয় গুণাবলীর ঘাটতি ব্যাপক, অথচ ইসলামিক গুণাবলীর সাথে সাথেই মৌলিক মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন না হতে পারলে, মানুষের কাছাকাছি না যেতে পারলে সত্যিকারের মুসলমান কিছুতেই হওয়া সম্ভব নয়। আমরা কি পারছি এই দু ধরনের গুনের সমাবেশ নিজের মধ্যে ঘটাতে ?

মোদ্দা কথা হল, একজন মুসলমান হবেন বিনয়ের এক মূর্ত প্রতীক।কারণ সে বিশ্বাস করে, আল্লাহ যেমন অসীম দয়াবান, তেমনি তার ক্রোধও অনেক ভয়ানক।তাই নিজেকে পারফেক্ট ভাবার রোগ থেকে আমাদের নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন